হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর। কারণ ঈমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি।” (ইবনে মাজাহ)
তাইতো আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে সুস্বাস্থ্য। ইবাদত-বন্দেগি থেকে শুরু করে সব কাজেই সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। সুতরাং মানুষের উচিত সব সময় সুস্থ থাকার চেষ্টা করা। আর এই সুস্থতার জন্য আজওয়া খেজুর খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
আজওয়া খেজুর নিয়ে মহানবী (সাঃ) এর কথা
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই মানুষদের রোগব্যাধি থেকে সুস্থতা লাভের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো সাহাবি যখন অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন তিনি তাদের দেখতে যেতেন। তাদের শরীরে হাত বুলিয়ে দিতেন। তাদের সুস্থতার জন্য দোয়া করতেন এবং সুস্থতা লাভের পরামর্শ দিতেন।
হজরত সাদ রাদিয়াআল্লাহু আনহু একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে দেখতে যান এবং হৃদরোগের চিকিৎসার নসিহত পেশ করেন। হজরত সাদ (রাঃ) বলেন, “আমি অসুস্থ ছিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এসেছিলেন। তিনি আমার বুকের ওপর হাত রাখলেন। তখন আমি হৃদয়ে শীতলতা অনুভব করলাম।
তিনি বলেন, তোমার হৃদরোগ হয়েছে।
এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে আজওয়া খেঁজুর খেতে দিয়ে বললেন, তুমি সাতদিন আজওয়া খেজুর খাবে তাহলে তুমি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ)
আজওয়া খেজুরের উপাদানসমূহ
আজওয়া খেজুরে প্রায় সবধরণের খাদ্য উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহে সার্বিকভাবে পুষ্টির যোগান দেয়। এসকল খাদ্য উপাদানগুলো হল – প্রোটিন, ভিটামিন (এ, বি১, বি২, বি৪, বি৫, বি৬, বি৯, সি, ই, কে) কার্বোহাইড্রেট, বেটা ক্যারোটিন লুটিন জিজানথেন, ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রণসহ আরও অনেক।
আজওয়া খেজুরের উপকারিতা
খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে দামী ও সর্বোত্তম খেজুর হলো আজওয়া খেজুর। যা দেখতে কালো ও মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। মদিনায় এ খেজুরের ফলন হয় বেশি। আর এই পবিত্র মদিনার ভূমিতে যে আজওয়া খেজুরের উৎপত্তি , তার উপকারিতা সম্পর্কে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন বিষ ও যাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” (বুখারি)মহানবী (সাঃ) এর বর্ণিত এই বাণী থেকে আমরা স্পষ্টতই বুঝতে পারি যে আজওয়া খেজুরের উপকারিতা কতটা বিস্তৃত। এই ফল সেবনে যেমন কোন প্রকার খারাপ জিনিসের প্রভাব আমাদের ওপর পরবে না, তেমন ছোট-বড় নানা রোগ-বালাই থেকেও রক্ষা করবে। হজরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আলিয়ার (মদিনার গ্রাম) আজওয়া খেজুর রোগ নিরাময়কারী এবং প্রাতঃকালীন প্রতিষেধক।” (মুসলিম)
আজওয়া খেজুর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন, “আজওয়া জান্নাতের ফল, এর মধ্যে বিষের নিরাময় রয়েছে।” (তিরমিজি)
শুধু আজওয়া খেজুর নয়, অন্যান্য খেজুরেও উপকারিতা রয়েছে বলে বিজ্ঞ আলেম ও পুষ্টিবিদগণ জানিয়েছেন। তবে তন্মোধ্যে আজওয়া উৎকৃষ্ট। এটি ছোট-বড় নানা রোগের নিরাময় হিসেবে কাজ করে। প্রাচীনকাল থেকে এখন অব্দি বিশেষত হৃদরোগ নিরাময়ে আজওয়া খেজুরের ভূমিকা লক্ষণীয়। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও আমাদের শরীরের নানা পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে সুস্বাস্থ্য অর্জনে সহায়তা করে।
পরিশেষে
মাহে রমজানে খেজুর দিয়ে ইফতার করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, “যে ব্যক্তি খেজুর পাবে সে যেন তা দিয়ে ইফতার করে। আর যদি না পায়, তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করবে কেননা তা অধিক পরিষ্কারক ও পবিত্র।” (আবু দাউদ ও তিরমিজি)
সারাদিন রোজা থাকার ফলে আমাদের শরীরের যে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়, তা খেজুর দ্বারা অতিসহজে পূরণ হয়ে যায়। এই জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খেজুর ও পানির কথা বলেছেন। আসন্ন রমজানে আমরা যেনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতে পারি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন এবং করোনা ও অন্যান্য রোগ থেকে আমাদের হেফাজত করুন।